বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০

পরিবহন শ্রমিকদের পাশে নেই চাঁদার ভাগ নেওয়ার নেতারা


করোনা পরিস্থিতির কারণে সকল কাজ বন্ধ থাকা পরিবহন শ্রমিকদের পাশে নেই সমিতি-ফেডারেশনগুলো। অথচ দৈনিক বাস-ট্রাকপ্রতি ৮০০ থেকে ১০০০ এবং ছোট গাড়িপ্রতি আনুপাতিক হারে চাঁদা আদায় করে থাকে পরিবহন শ্রমিক ও মালিক সংগঠনগুলো। এর বাইরে মাসিক হিসাবেও শ্রমিকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা আদায় করা হয়ে থাকে। টার্মিনাল ও অঞ্চলকেন্দ্রিক শ্রমিক-মালিক সমিতি, কল্যাণ তহবিল ও তাদের কেন্দ্রীয় ফেডারেশন রয়েছে। উদ্বেগের বিষয়, শ্রমিকদের কাছ থেকে তোলা চাঁদার কোটি কোটি টাকা এসব সমিতি ও ফেডারেশন নেতারা নিয়মিত জমা নিলেও এ টাকার কোনো হদিস নেই। যাদের কল্যাণের নামে এসব চাঁদা তোলা হয়, তারা এখন কঠিন দিন অতিবাহিত করছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, শ্রমিকদের কল্যাণের নামে তোলা মোটা অঙ্কের চাঁদার টাকা যায় কোথায়? জানা যায়, শ্রমিকদের কল্যাণে সরকারের তত্ত্বাবধানে আছে ৫০০ কোটি টাকা, এর বাইরে বিভিন্ন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নামে কয়েকশ’ কোটি টাকা তোলা হয়েছে। আমরা মনে করি, দৈনিক আয়নির্ভর এই অসহায় শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে এগিয়ে আসা দরকার, পাশাপাশি তাদের চাঁদার কোটি কোটি টাকা হিসাব-নিকাশ করে তা তাদের কল্যাণে ব্যয়ের উদ্যোগ নেয়াও প্রয়োজন। যদি কথিত নেতারা শ্রমিক কল্যাণের অর্থ তছরুপ করে থাকে, তবে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। লক্ষণীয়, শ্রমিকদের মোটা অঙ্কের টাকাই যে কেবল আত্মসাৎ করা হচ্ছে তা নয়, বিভিন্ন সময় সরকারের ও আদালতের জনহিতকর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত আটকে দেয়ার জন্যও অবুঝ শ্রমিকদের ব্যবহার করে থাকে স্বার্থবাজ, সুযোগসন্ধানী মালিক ও শ্রমিক নেতারা। অথচ শ্রমিকের অসহায় মুহূর্তে পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, অনেক নেতা সহায়তা প্রদানের ভয়ে টার্মিনাল ও কার্যালয়মুখীও হচ্ছেন না এখন। আমরা মনে করি, শ্রমিক, যাত্রী তথা জনসাধারণ, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে সরকারকে জিম্মি করা শ্রমিক-মালিক নেতা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এবং চাঁদার টাকা লোপাটকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনার এখনই সময়। এছাড়া শ্রমিকদের কল্যাণে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের শ্রমিক কল্যাণ তহবিল এবং শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর কল্যাণ তহবিলের টাকা বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে কীভাবে শ্রমিকদের জন্য ব্যবহার করা যায় সে পথও খোঁজা দরকার। আইন অনুযায়ী কেবল মৃত্যু ও দুর্ঘটনার বাইরে এসব অর্থ ব্যবহারের সুযোগ নেই বলে বসে থাকা যৌক্তিক হতে পারে না। শ্রমিক কল্যাণে তোলা চাঁদার টাকা মালিক-শ্রমিক নেতা, রাজনৈতিক ও পুলিশ-প্রশাসনিক সংশ্লিষ্ট অসাধুদের ভাগবাটোয়ারা করে নেয়ার মতো দুর্নীতি, অসততা মেনে নেয়া যায় না। শ্রমিকদের কাছ থেকে তোলা টাকা মালিকদের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার বিষয়টিও দুর্ভাগ্যজনক বলতে হবে। অসাধু এ মালিক-শ্রমিক নেতারাই সড়ক আইন বাস্তবায়নে বাধা দিয়েছে শ্রমিকদের ব্যবহার করে। আশার কথা, সাধারণ শ্রমিকরা বলছেন, এসব নেতাকে এখনই চিনে রাখা হবে। সরকারেরও উচিত সড়কে শৃঙ্খলা-নিরাপত্তা রক্ষায় মালিক-শ্রমিক নেতা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরব হওয়া। শ্রমিকদের চাঁদার অর্থ কীভাবে হরিলুট হয়েছে, তা তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি তহবিলে থাকা অর্থ শ্রমিক কল্যাণে ব্যয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। 
সুত্র অনলাইন সংস্করণ


শেয়ার করুন

Author:

[সংবাদ, নরম এবং কেবল প্রচার নয়। সাধারণ মানুষের বাস্তব প্রত্যাশা] [সাংবাদিকতা কখনও নীরব হতে পারে না: এটি তার সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ এবং তার সর্বশ্রেষ্ঠ] “আমরা শুধু সামনের দিকেই এগুতে পারি; আমরা নতুন দরজা খুলতে পারি, নতুন আবিষ্কার করতে পারি – কারণ আমরা কৌতুহলী। আর এই কৌতুহলই আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা”

0 coment rios:

ধন্যবাদ কমেন্ট করার জন্য